মানবিকতা বনাম পৈশাচিকতা

লোকটির হাত দুটি খেয়াল করে দেখেন পানিতে থাকতে থাকতে কি পরিমানে ফুলে গেছে।
লোকটির নাম রবীন্দ্রনাথ দাস। বাড়ি ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলায়। পেশায় একজন মৎস্যজীবী। গত ৮ দিন আগে ভারতের হলদিয়া অঞ্চলে বঙ্গোপসাগরে নৌকা নিয়ে মাছ ধরছিল সে ও তার ১৫ জন সাথি। হটাত প্রচন্ড ঝড় শুরু হয়। একসময় নৌকা উল্টে যায়। প্রচন্ড ঢেউয়ে একেকজন একেক দিকে ভেসে যায়। এই রবীন্দ্রনাথও ভেসে যায়।
ভাসতে ভাসতে ৭ দিন পার হয়ে যায়। সাতদিন পর প্রায় ৬০০ কি.মি. ভাসতে ভাসতে বাংলাদেশের কুতুবদিয়ায় এসে পৌঁছে। তখন বাংলাদেশের জাহাজ ‘এমভি জাওয়াদের’ ক্যাপ্টেন অনেক দূর থেকে তাকে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পায়। দেখতে পেয়ে তড়িঘড়ি করে তার দিকে লাইফ জ্যাকেট ছুঁড়ে মারে। কিন্তু সে ধরতে পারে না। তলিয়ে যায়। কিন্তু জাহাজের ক্যাপ্টেন জাত পাত, ধর্মীয় ভেদাভেদ, সীমানার কাঁটাতার ভুলে তার পিছনে ছুটতে থাকে। একজন মানুষের পিছনে ছুটতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ পর কিছুটা দূরে আবার তাকে দেখা যায়। ক্যপ্টেন তাৎক্ষনিক জাহাজ সেদিকে ঘুড়িয়ে আবার একটি লাইফ জ্যাকেট ছুড়ে মারে। এক পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ লাইফ জ্যাকেট ধরতে পারে। এবং ধীরে ধীরে জাহাজের দিকে আসতে থাকে। জাহাজের কাছাকাছি আসলে ক্যারেন ফেলে তাকে জাহাজের উপর তোলা হয়।
রবীন্দ্রনাথকে যখন সফল ভাবে জাহাজে তোলা সম্ভব হয় তখন জাহাজের সকল নাবিকেরা খুশিতে চিৎকার করে উঠে। একজন মানুষের জীবন বাঁচানোর আনন্দে তারা আত্মহারা হয়ে যায়। একজন মৃত্যু মুখের যাত্রীকে জীবন ফিরে দেয়ার যে উত্তেজনা…
ধন্যবাদ এমভি জাওয়াদের ক্যপ্টেনকে। ধন্যবাদ এমভি জাওয়াদে উপস্থিত সকল নাবিককে। একজন মানব সন্তানকে জীবন ফিরিয়ে দিয়ে মানবতার যেই উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তা পৃথিবীবাসীকে আরো বেশি মানবিক হতে শেখাবে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলতে শেখাবে। মানুষ হতে শেখাবে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, রবীন্দ্রনাথকে যখন বাংলাদেশের নাবিকরা উদ্ধার করছে ঠিক সেই মহূর্তে চাপাইনবাবগঞ্জে ভারতীয় বিএসএফ দুই বাংলাদেশীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে।
আমরা জীবন বাঁচিয়ে মানবতা দেখিয়েছি। আমাদের যে মেরেছে এটা কপালে লিখা ছিল। বলা হয় কপালের লিখন যায় না খন্ডন। আমাদের তো সয়ে গেছে!
এভাবে বললে ভুল হবে না সয়ে গেছে গুরু ….. সাল থেকে শুরু!!
আমাদের জন্য সমবেদনা এটা যে, গানের মাধ্যমে বলি – যেন কিছু মনে করো না তারা যদি গুলি করে/পিটিয়ে মারে, কত কি যে সয়ে যেতে হয় ভালবাসা হলে …
পরিশেষে বলতে চাই, মানবিক বাংলাদেশ চাই। কবির ভাষায় যদি বলি আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে আমি বাঁধি তার ঘর।
আফজাল হোসাইন মিয়াজী
(লেখক, সাংবাদিক)
১২-০৭-২০১৯ইং
Amader Nangalkot'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। আমাদের নাঙ্গলকোট পত্রিকা তথ্য মন্ত্রনালয়ের তালিকাভক্তি নং- ১০৫।
- Copyright © Amader Nangalkot All Rights Reserved-2010-2019.
- সম্পাদক বাপ্পি মজুমদার ইউনুস কর্তৃক প্লট নং-২২১/১৬, ব্লক-বি, কুমিল্লা-৩৫০০ থেকে প্রকাশিত।
- সম্পাদক ও প্রকাশক:- বাপ্পি মজুমদার ইউনুস
- নির্বাহী সম্পাদক:- ফারুক আল শারাহ্
- বার্তা সম্পাদক:- খন্দকার আলমগীর হোসাইন
- ব্যবস্থপনা সম্পাদক:- ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী মিলন
- উপ- সম্পাদক:- আজিম উল্লাহ হানিফ
- উপ-সম্পাদক- মুকুল মজুমদার
- সাহিত্য সম্পাদক- মো: তাজুল ইসলাম
- আইন উপদেষ্টা
- ব্যারিস্টার মিয়া মোহাম্মদ কামরুজ্জামান- সুপ্রিম কোর্ট
- এ্যাডভোকেট হামিদুল হক ভূঁইয়া- জজ কোর্ট- কুমিল্লা
- এ্যাডভোকেট মোস্তফা জামান জসিম- জজ কোর্ট- কুমিল্লা
- •••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
- নিউজ রুম- 01930 10 62 63
- ই-মেইল- dailyamadernangalkot@gmail.com

পাঠকের মন্তব্য: